রূপকথার গল্প থেকে শুরু করে মহাকাব্য- চুল নিয়ে কত কবি যে কত লেখা লিখে গিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। প্রতিটা মানুষের কাছেই চুল তাদের মহামূল্যবান সম্পদ। আর এই চুল পড়া যখন অস্বাভাবিক গতিতে বৃদ্ধি পায় তখনই তা মানুষের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া বা হতাশাবোধ হতে পারে এই অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণে। তাই চুল পড়া কমানোর সঠিক উপায় জানা এবং তা অনুসরণ করা জরুরী।
এই ব্লগে চুল পড়া কমানোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
চুল পড়ার কারণ
চুল পড়া কমানোর আগে এর মূল কারণগুলো সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। বিভিন্ন কারণে চুল পড়তে পারে। যেমন,
১। বংশগত কারণ
এটি চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ। জেনেটিক কারণে মানুষের অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা হতে পারে।
২। হরমোনের পরিবর্তন
প্রেগনেন্সি, মেনোপজ বা থাইরয়েডের সমস্যার কারণে অনেক সময় হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায় এবং এর কারণে অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে।
৩। মানসিক চাপ
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ চুলের ফলিকল দুর্বল করে দেয়। ফলে চুল পড়া বেড়ে যায়।
৪। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ বা চিকিৎসা যেমন কেমোথেরাপি, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস এবং ব্লাড থিনার্সের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চুল পড়তে পারে।
৫। পুষ্টির অভাব
চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টির প্রয়োজন। আয়রন, জিঙ্ক, ভিটামিন ই এবং প্রোটিনের অভাবে চুল দুর্বল হয়ে ঝরে যেতে পারে।
৬। শারীরিক সমস্যা বা অসুস্থতা
স্বাস্থ্যগত কিছু সমস্যা যেমন স্ক্যাল্পের সংক্রমণ, অ্যানিমিয়া, লুপাস, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
চুল পড়া কমাতে করণীয়
- চুলে ঘরোয়া বিভিন্ন উপকারী জিনিসের ব্যবহার
১। পেঁয়াজের রস
পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে সালফার থাকায় মাথায় পেঁয়াজের রস দিলে চুলের ফলিকলে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। চুল হয় আরও মজবুত।
২। আ্যলোভেরা
মাথার তালুতে অ্যালোভেরা জেল লাগালে চুল পড়ার জন্য দায়ী ইরিটেশন ও ইনফ্ল্যামেশন দূর হয়। এর পাশাপাশি চুল দ্রুত বাড়তে সাহায্য করে।
৩। টক দই
টক দইয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। টক দইয়ের হেয়ার মাস্ক চুলে লাগালে চুল মজবুত হয়। মাথার তালুর সুস্থতা বজায় রাখতেও টক দই দারুন কার্যকরী।
৪। গ্রিন টি
ডিএইচটি নামের এক ধরনের হরমোন চুল পড়ার জন্য সরাসরি দায়ী। গ্রিন–টি এই হরমোনকে ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে। গ্রিন–টি ঠান্ডা করে মাথার তালুতে লাগালে চুল পড়া অনেকটা কমে যায়।
৫। আমলকী
আমলকীতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এর পুষ্টি উপাদানগুলো চুলের ফলিকল কে মজবুত করে, চুল পড়া কমায়। তাই আমলকি খাওয়ার পাশাপাশি আমলকীর তেল ও মাস্ক ব্যবহারেও অনেক উপকারীতা পাওয়া যায়। চুল পড়া রোধ করা সহ নতুন চুল গজাতেও এটি কার্যকরী।
- চুল পড়া কমাতে কিছু নিয়ম মেনে চলা
সঠিকভাবে চুলের যত্ন নেয়ার মাধ্যমে চুল পড়া অনেকাংশে কমানো সম্ভব। যেমন নিয়মিত চুলে তেলের মাসাজ করা জরুরি। এক্ষেত্রে ক্যাস্টর অয়েল ও অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এই নিয়মিত তেলের মাসাজ চুল পড়া কমানোর পাশাপাশি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করবে।
চুলে সপ্তাহে কতবার শ্যাম্পু ব্যবহার করছি সেটার উপরও আমাদের চুল পড়া নির্ভর করে। মাথার ত্বক শুষ্ক হলে, সপ্তাহে একবার শ্যাম্পু করাই ভালো। আর মাথার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় তাহলে ২-৩ বার শ্যাম্পু করা যেতে পারে।
এছাড়া কিছু হারবাল হেয়ার প্যাক আছে, যা চুলের সাস্থ্য ঠিক রাখতে যথেষ্ট কার্যকরী।
চুল কালার করা, স্ট্রেট করা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হতে পারে। এছাড়া ভেজা চুলে হেয়ার কার্লার, ব্লো ড্রায়ার ব্যবহার করা কখনোই উচিত নয়। এতে চুলে ভঙ্গুরতা সৃষ্টি হয়।
- খাদ্যাভ্যাস
ডিম, দুধ, সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকায় এসব খাবার আমাদের চুলের জন্য দারুন উপকারী।
ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উপকারী। যেমন বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, অ্যাভোকাডো, পেঁপে, আম ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে।
আয়রনের অভাবে অ্যানিমিয়া হতে পারে, যা চুল পড়ার অন্যতম কারণ। কলিজা, রেড মিট, পালং শাক, মটরশুঁটিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। তাই এসব খাবার নিজেদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই রাখা উচিত।
পিওর অলিভ অয়েল, অ্যালোভেরা সুদিং জেল, হারবাল হেয়ার প্যাকসহ হেয়ার কেয়ার এবং স্কিন কেয়ারের অথেনটিক সব প্রোডাক্ট পেতে ভিজিট করুন mylavino.com এ। অথবা অর্ডার করুন ফেসবুক পেজ Lavino থেকে।
লিখেছেন আফরোজ জান্নাত হৃদিতা